রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আবেগাপ্লুত খালেদা জিয়া

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের উপর জুলুম, নির্যাতন, নিধনযজ্ঞ বন্ধ এবং নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার ময়নারঘোনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে এ আহ্বান জানান বেগম জিয়া। এ সময় রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া।



খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের যেভাবে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিলো, সেভাবে তারা দাঁড়াতে পারেনি। বরং যারা কাজ করতে চায় তাদেরও নানাভাবে বাঁধার সৃষ্টি করছে। জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আমি বলব, আপনারা অবিলম্বে এই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ান। সরকারকে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে বলব। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এই দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে অতিদ্রুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং নির্ভয়ে-নির্দ্বিধায় বসবাস করতে পারে। মিয়ানমার সরকারকে বলব, আপনারা মানবতার খাতিরে অতিদ্রুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে নিজের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। তাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা অমানবিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারটিও খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ধনী নয় গরিব, কিন্তু ভালোবাসা আছে। সেজন্য গরিব হয়েও যে যেভাবে পেরেছে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন এই ভার বহন করার সম্ভব নয়। সেজন্য অতিদ্রুত তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ তৎপরতায় সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি পর্যন্ত নয়। বিএনপি প্রথম থেকেই রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে এ সময় ত্রাণ তৎপরতাসহ বিএনপির বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি। কূটনৈতিক তৎপরতা ও আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন বেগম জিয়া। অতীতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে বিএনপি সরকারের সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন দলটির চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে একবার এমন হয়েছিলো। তখন মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। ’৯৩ সালেও আবার এসেছিলো আমার সরকারের আমলে। তখনও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। সেনা মোতায়েনে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ তৎপরতায় শৃঙ্খলা এসেছে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই প্রক্রিয়ায় সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা বাহিনীকে এখানে রাখতে হবে। দেশি ও আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা ত্রাণ নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান বিএনপি প্রধান। নিজের ত্রাণ দেয়ার সফরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, কারা এই হামলা চালিয়েছে সরকার তা জানে এবং সেটা মিডিয়াতেও দেখা গেছে। সরকারকে অবশ্যই এগুলো বন্ধ করতে হবে। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। বরং এগুলো করে মানুষের কাছ থেকে আপনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। তিনি সাংবাদিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং আহতদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এর আগে দুপুর ১টার দিকে খালেদা জিয়া যখন ময়নারগোনা ক্যাম্পে পৌঁছান তার আগে থেকে সেখানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিল হাজারো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। বিএনপি নেত্রীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পে তখন নেতাকর্মী, স্থানীয় মানুষ আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিলে সমাবেশস্থলে রূপ নেয়। এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতারা বেগম জিয়ার পাশে ছিলেন।



নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আবেগাপ্লুত খালেদা জিয়া
ময়নার ঘোনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে গিয়ে এক নারীর মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে কিছুক্ষণের জন্য আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। ত্রাণ দেয়ার এক পর্যায়ে এক রোহিঙ্গা নারী মোবারকের মা মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। খালেদা জিয়া সেই কাহিনী শুনে কিছুক্ষণের জন্য আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। বিএনপি প্রধান তাদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন এবং আল্লাহকে স্মরণ করার পরামর্শ দেন। এ সময় তিন-চার মাস বয়সী এক রোহিঙ্গা শিশুকে কাছে টেনে কোলে তুলে আদর করেন বেগম জিয়া।

ময়নারঘোনা ক্যাম্প থেকে হাকিমপাড়া ক্যাম্পে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানে ত্রাণ বিতরণ করে তিনি যান বালুখালী-২ নম্বর ক্যাম্পে। সবশেষে খালেদা জিয়া যান বালুখালীর পানবাজারে। সেখানে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবÑ স্থাপিত একটি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পের কয়েকটি নতুন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের জন্য বিএনপির ত্রাণ
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ১১০টন চাল ত্রাণ হিসেবে দিয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন। এছাড়া ৫ হাজার প্যাকেট শিশুখাদ্য ও প্রসূতি মায়েদের জন্য ৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ দেয় বিএনপি। পুরো ত্রাণের সামান্য কিছু নিজ হাতে বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। বাকি ত্রাণগুলো সকালেই উখিয়ায় সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ত্রাণ সমন্বয় কেন্দ্রে জমা দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ৪৩টি ট্রাকে করে এসব ত্রাণ সেনাবাহিনীর ত্রাণ সমন্বয় কেন্দ্রে জমা দেন। এর মধ্য থেকে ৯ ট্রাক সফরসঙ্গী সিনিয়র নেতাদের নিয়ে খালেদা জিয়া বিতরণ করেন। মোট ১১ হাজার পরিবারের জন্য এ ত্রাণের ব্যবস্থা করে বিএনপি। খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে অংশ নেনÑ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না, সদর আসনের সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল, হাসিনা আহমেদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, কাজী আলাউদ্দিন, কাজী আবুল বাশারসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের কেন্দ্রীয় নেতারা। উখিয়ায় ত্রাণ বিতরণের পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউসে ফিরেন খালেদা জিয়া। সেখানে কয়েকঘণ্টা বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের উদ্দেশে কক্সবাজার ছাড়েন তিনি। সেখানে রাত্রীযাপন করে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ছেড়ে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

0 Response to " রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আবেগাপ্লুত খালেদা জিয়া"

Post a Comment

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel