আদালতে খালেদা জিয়া মামলা ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দ্বিতীয় দিনের বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে আবেগে আপ্লুত খালেদা জিয়া বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলা ‘ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। রাজধানীর বকশীবাজারে বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল। কিন্তু তার সৌভাগ্য যে আমার মতো তার আদালতে ঘুরতে হচ্ছে না। দ্বিতীয় দিনেও নিজের বক্তব্য শেষ না করে খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি চাইলে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান তা মঞ্জুর করে ২ নভেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন। জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলাও একই দিনে এ আদালতে আসবে।
বহুবার তারিখ পেছানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন গত ১৯ অক্টোবর। সেদিন তিনি দাবি করেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে এতিমদের জন্য আসা একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি, তা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। আর বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, তিন যুগ আগে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন ‘দেশ ও জাতির ডাকে সাড়া দিয়ে’।
ক্ষমতার মসনদে বসার লোভ তখন তার মধ্যে ‘ছিল না’। আমরা গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করতে চাই। দ্বন্দ্ব সংঘাতের বদলে শান্তি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই এ দেশে। আমাদের বিরুদ্ধে সব মামলাই ভুয়া মামলা। আমার কী অপরাধ যে আমাকে এরকম আদালতে ঘুরতে হচ্ছে? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। আমাকে চার দশকের স্মৃতি বিজড়িত বাসা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এ সরকার আমাকে যখন আমাকে গুলশানের বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল, তখন আমার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু সংবাদ পাই। ছেলের কথা বলতে বলতে বক্তব্যের এ পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরে তিনি বলেন “নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা সর্বমতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রর্বতন করেছিলাম।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সঙ্কট থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করতে চাই। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। খালেদা জিয়ার দাবি করেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে ‘নির্বাচিত সরকার নয়’, কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সিংহভাগ ভোটারই ভোট দেননি। খালেদা জিয়া যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় নথিতে তা লিখে রাখছিলেন বিচারক আখতারুজ্জামান। বিএনপি নেত্রীর এসব বক্তব্য মামলার সঙ্গে ‘প্রাসঙ্গিক নয়’ মন্তব্য করে তা নথিতে যুক্ত না করার আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। কিন্তু বিচারক তাতে অসম্মতি জানান। শুনানিতে কাজলের সঙ্গে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, আবদুর রেজাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া ও নুরুজ্জামান তপন। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।
0 Response to "আদালতে খালেদা জিয়া মামলা ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য"
Post a Comment