বৃহস্পতিবার খুলছে মগবাজার মালিবাগ ফ্লাইওভার

সকল জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার খুলছে রাজধানীবাসীর বহুল আকাঙ্খিত মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ সমন্বিত ফ্লাইওভার। নির্মাণকাজ শেষে হওয়ার পর কয়েক দফা উদ্বোধনের ঘোষণা দিলেও তা সম্ভব না হওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। অবশেষে ঘটতে যাচ্ছে তাদের এই হতাশার সমাপ্তি। এদিন দুপুর ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে দীর্ঘ ৬ বছরের অপেক্ষা-দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে যান চলাচলে পুরোপুরি খুলে যাচ্ছে তিনভাগে নির্মিত ফ্লাইওভারটি।
সূত্র জানায়, এ বছর কয়েক দফায় ফ্লাইওভার উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হলেও যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে উদ্বোধনের কথা ছিলো এ ফ্লাইওভার। কিন্তু জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭২তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে ছিলেন। ফলে সে সময়েও উদ্বোধন সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। তবে এ যাত্রায় আর আশাহতের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের এ ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। ফলে এদিনই খুলে যাবে এ ফ্লাইওভার।এদিকে রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মগবাজার রেলক্রসিং, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকায় আগে থেকেই লেগে থাকা যানজট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর রাস্তায় বৃষ্টির দিনে কাদা-পানি আর রোদের দিনে ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মানুষ। রিকশা-ভ্যানগাড়ি-সিএনজির মতো ছোট ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ছিল নিত্য নৈমিত্তিক। নারী-শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষ এ পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, আহত হয়েছেন।
ফলে মানুষের ভোগান্তি কমাতে গত বছরের ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা-মগবাজার অংশের উদ্বোধন করেন। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর ইস্কাটন-মৌচাক অংশের যান চলাচল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পপী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর গত ১৭ মে খুলে দেওয়া হয় ফ্লাইওভারটির এফডিসি মোড় থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত কারওয়ানবাজারমুখী অংশ। এখন শান্তিনগর থেকে বাংলামোটর ও রামপুরা থেকে শান্তিনগর হয়ে রাজারবাগ অংশ উদ্বোধন হলেই তাদের সকল দুর্ভোগের অবসান হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর ও তেজগাঁওয়ের যানজট নিরসন ও অবাধ যান চলাচল নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকার। পরে ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। এর পরে ধাপে ধাপে নকশা পরিবর্তন ও নির্মাণ ব্যয় বাড়তে থাকে এ প্রকল্পের । প্রথমে ২০১৪ সালের মধ্যে এ ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় ধাপে ধাপে মেয়াদও বাড়তে থাকে প্রকল্পের। এখন সবশেষে সম্পূর্ণরূপে আগামী বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এ ফ্লাইওভার।
বৃহস্পতিবার মৌচাক এড়িয়ে চলার অনুরোধ মেয়রের
মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে বৃহস্পতিবার মৌচাক-মালিবাগ এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বেলা ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রকল্প সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকবেন মৌচাক এলাকায় বানানো অনুষ্ঠান মঞ্চে। মেয়র সাঈদ খোকন বুধবার দুপুরে বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মৌচাক এলাকায় প্যান্ডেল তৈরি করা হবে। এ কারণে ওই এলাকায় যানজট হতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে থাকবেন। আমরা থাকব এই প্রান্তে। সেখানে একটা অনুষ্ঠান হবে। এ কারণে ওই রাস্তাটা বন্ধ থাকবে। নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা খুব জরুরি কাজ না থাকলে ওই এলাকার সড়ক ব্যবহার না করেন। যানজট এড়াতে তারা যেন বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করেন। মেয়র বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ব্যক্তি, সংগঠন অনুষ্ঠানে আসবেন। তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন তো, এ কারণে যানবাহন চলাচল কিছুটা বিঘ্ন হবে। এ কারণে আমরা অনুরোধ করছি এ এলাকা এড়িয়ে চলতে।
0 Response to "বৃহস্পতিবার খুলছে মগবাজার মালিবাগ ফ্লাইওভার"
Post a Comment